Sunita Williams: মানুষের স্বপ্ন সবসময়ই আকাশ ছোঁয়ার, কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তব হলে কেমন হয়? আমরা বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে (Science Fiction) দেখে অভ্যস্ত যে, মহাকাশ ভ্রমণ (Space Travel) মানেই শূন্য মাধ্যাকর্ষণে (Zero Gravity) ভেসে বেড়ানো, নক্ষত্রদের মাঝে ঘুরে বেড়ানো বা অন্য কোনো গ্রহে বসতি গড়ার কল্পনা। কিন্তু বাস্তবের নভোচারীদের (Astronaut) জীবন কি এতটাই রোমাঞ্চকর?
বাস্তবে মহাকাশ মিশন (Space Mission) মানেই কঠোর শৃঙ্খলা, প্রতিদিনের নির্দিষ্ট রুটিন (Routine), এবং নানা রকম চ্যালেঞ্জ। পৃথিবী থেকে কয়েকশো কিলোমিটার ওপরে, যেখানে নেই মাধ্যাকর্ষণ (Gravity), নেই পরিচিত পরিবেশ—সেখানে প্রতিটি মুহূর্ত কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে ঘুমানো, শরীর সুস্থ রাখা থেকে গবেষণা—সব কিছুতেই রয়েছে কঠোর নিয়ম। আর সেই কঠিন বাস্তবতার মধ্যেই দীর্ঘ ৯ মাস কাটিয়ে অবশেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (NASA)-র দুই অভিজ্ঞ নভোচারী (Astronaut), সুনিতা উইলিয়ামস (Sunita Williams) ও ব্যারি ইউজিন বুচ উইলমোর (Barry Eugene “Butch” Wilmore)।
৮ দিনের মিশন (Mission) থেকে ৯ মাস মহাকাশে আটকে যাওয়া!
গত বছরের ৫ জুন মাত্র ৮ দিনের জন্য বোয়িং স্টারলাইনার (Boeing Starliner)-এ করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (International Space Station – ISS)-এ গিয়েছিলেন সুনিতা (Sunita) ও বুচ (Butch)। পরিকল্পনা ছিল কয়েক দিনের মধ্যেই পৃথিবীতে ফিরে আসার, কিন্তু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তাঁদের আর ফেরা সম্ভব হয়নি! ফলে ৮ দিনের পরিকল্পনা রূপ নিল ৯ মাসের দীর্ঘ অভিযানে।
এই সময়ের মধ্যে তাঁরা শুধু অপেক্ষা করেননি, বরং গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা, মহাকাশ স্টেশনের (ISS) রক্ষণাবেক্ষণ, এমনকি মহাকাশে হাঁটা (Spacewalk) পর্যন্ত করেছেন। মহাকাশে থাকলেও তাঁরা অংশ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন (US Presidential Election)-এ, উদযাপন করেছেন ক্রিসমাস (Christmas), এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে প্রতিদিন ব্যায়াম (Workout) করেছেন। কিন্তু তাঁদের এই দীর্ঘ মিশন (Mission) শুধুই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের মহাকাশ অনুসন্ধানের (Space Exploration) জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো।
গবেষণা ও মহাকাশে হাঁটা (Spacewalk): ভবিষ্যতের জন্য তথ্য সংগ্রহ
সুনিতা (Sunita) ও বুচ (Butch) মহাকাশে বসে শুধু সময় কাটাননি, তাঁরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এ থেকে ১৫০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করেছেন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (NASA)-র সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল মন্তালবানো (Joel Montalbano) জানিয়েছেন যে, তাঁদের গবেষণা ভবিষ্যতে চাঁদে অভিযানের (Moon Mission) ও মঙ্গল অভিযানের (Mars Mission) প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই দীর্ঘ মিশনের (Mission)-এর অংশ হিসেবে তাঁরা নাইসার এক্স-রে টেলিস্কোপ (NICER X-ray Telescope)-এর উন্নয়ন করেছেন, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (ISS)-এর বিভিন্ন অংশ মেরামত করেছেন এবং দুটি মহাকাশে হাঁটার (Spacewalk) অংশ নিয়েছেন। জানুয়ারিতে প্রথম মহাকাশে হাঁটার (Spacewalk) সময় তাঁরা মহাকাশ স্টেশনের (ISS) ডকিং মডিউল মেরামতের কাজ করেন, এরপর দ্বিতীয় মহাকাশে হাঁটার (Spacewalk) সময় প্রতিফলক যন্ত্র (Reflector Device) প্রতিস্থাপন করেন।
শূন্য মাধ্যাকর্ষণে জীবন (Zero Gravity): প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ
শূন্য মাধ্যাকর্ষণে (Zero Gravity) দীর্ঘদিন কাটানো সহজ নয়। মাধ্যাকর্ষণ (Gravity) না থাকায় মানুষের শরীরে নানা পরিবর্তন আসে, যেমন হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া, পেশির শক্তি হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি। এসব সমস্যা এড়াতে তাঁরা প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে ব্যায়াম (Exercise) করেছেন।
সুনিতা (Sunita Williams) বলেন, “মহাকাশে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু আমরা প্রতিদিন ব্যায়াম (Workout) করে সেটা নিশ্চিত করেছি।” তাঁরা উন্নত প্রতিরোধমূলক ব্যায়াম যন্ত্র (Advanced Resistive Exercise Device) ব্যবহার করে স্কোয়াট (Squats), ডেডলিফট (Deadlifts) এবং দৌড়ানোর জন্য ট্রেডমিল (Treadmill)-এ অনুশীলন করেছেন, যাতে শরীর সুস্থ থাকে।
পৃথিবীকে নতুনভাবে দেখা (Earth): এক অনন্য অভিজ্ঞতা
মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে (Earth) দেখা এক অন্যরকম অনুভূতি। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) প্রতি ৯০ মিনিটে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে, ফলে প্রতিদিন ১৬ বার সূর্যোদয় (Sunrise) ও সূর্যাস্ত (Sunset) দেখার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা।
সুনিতা (Sunita Williams) বলেন, “মহাকাশ (Space)-থেকে পৃথিবীকে (Earth) দেখলে বোঝা যায়, এটি আমাদের একমাত্র গ্রহ, এবং আমাদের উচিত এর যত্ন নেওয়া।” মহাকাশে কাটানো দিনগুলো শুধু তাঁদের কর্মজীবন (Career) নয়, তাঁদের চিন্তাভাবনার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দিয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠে অবতরণ (Splashdown): অবশেষে পৃথিবীতে ফেরা
মহাকাশে ৯ মাস কাটানোর পর ক্রু-১০ মিশনের (Crew-10 Mission) সদস্যরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এ পৌঁছালে সুনিতা (Sunita Williams) তাঁদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এরপর স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগন (SpaceX Crew Dragon)-এ করে তাঁরা পৃথিবীর (Earth) পথে রওনা দেন।
অবশেষে, ফ্লোরিডা (Florida)-র উপকূল থেকে ৫০ মাইল দূরে আটলান্টিক মহাসাগরে (Atlantic Ocean) সফলভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠে অবতরণ (Splashdown) করেন সুনিতা (Sunita Williams) ও বুচ (Butch)। তাঁদের এই দীর্ঘ ৯ মাসের অভিজ্ঞতা শুধু তাঁদের জন্য নয়, বরং গোটা মহাকাশ গবেষণার (Space Research) জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকলো। ভবিষ্যতে চাঁদ (Moon) ও মঙ্গল (Mars)-এ মানুষের স্থায়ী বসবাসের স্বপ্ন পূরণে এই অভিজ্ঞতা নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।