Ekchokho.com 🇮🇳

স্মার্ট মিটার মানেই বাড়তি বিল? বিদ্যুৎ চুরি আটকাতে স্মার্ট মিটার, না কি সাধারণ মানুষের পকেট কাটার ফাঁদ?

Last Updated:
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও তুঙ্গে। কিন্তু তার মধ্যেই সামনে আসছে এক নতুন সংকট—হঠাৎ হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়া। গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন ফ্যান-এসি ছাড়া এক মুহূর্ত থাকা অসম্ভব, তখন এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে। অনেকের অভিযোগ, স্মার্ট মিটার (Smart Meter) লাগানোর পর থেকেই এই সমস্যা আরও বেড়েছে।

বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত ও স্বচ্ছ করতে দেশের সব বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু এই নতুন ব্যবস্থাকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। স্মার্ট মিটার চালুর পর থেকে অনেক গ্রাহকের বিল অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত, আর এই আতঙ্কই এখন রূপ নিচ্ছে দেশজুড়ে বিক্ষোভের।

স্মার্ট মিটার কেন বিতর্কের কেন্দ্রে?

স্মার্ট মিটার আসলে কী? এটি বিদ্যুতের স্বয়ংক্রিয় মিটার, যা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য সরাসরি বিদ্যুৎ সংস্থার কাছে পাঠায়। এতে মিটার রিডিংয়ের ঝামেলা থাকে না, আর বিদ্যুৎ চুরি বা ভুল বিলের সম্ভাবনাও কমে যায়। কেন্দ্রের দাবি, স্মার্ট মিটার চালু হলে সঠিক বিলিং নিশ্চিত হবে, বিদ্যুৎ অপচয় কমবে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও স্থিতিশীল হবে।

তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, স্মার্ট মিটার লাগানোর পর বিদ্যুৎ বিল হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে গেছে। কেউ কেউ বলছেন, তারা যেভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তার চেয়ে অনেক বেশি বিল আসছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে মিটারের রিডিং অনিয়মিত দেখা যাচ্ছে, যা নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

বাংলায় স্মার্ট মিটার ইস্যুতে কী ঘটছে?

দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও স্মার্ট মিটার ইস্যুতে ক্ষোভ বাড়ছে। সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যে ইতিমধ্যেই ১.২৫ লক্ষ স্মার্ট মিটার ইনস্টল করা হয়েছে, যা মূলত সরকারি অফিস এবং বড় বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে ধীরে ধীরে সাধারণ গ্রাহকদের বাড়িতেও স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।

এই নিয়েই আপত্তি তুলেছে বিদ্যুৎ গ্রাহক সংগঠনগুলি। বারাসত, মধ্যমগ্রাম, কল্যাণী-সহ বেশ কিছু এলাকায় অভিযোগ উঠেছে যে, গ্রাহকদের অনুমতি ছাড়াই তাদের বাড়িতে স্মার্ট মিটার লাগানো হচ্ছে। অথচ বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ অনুযায়ী, গ্রাহকের সম্মতি ছাড়া এই ধরনের মিটার বসানো আইনত বৈধ নয়। ফলে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে এবং ধীরে ধীরে তা আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে।

স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ

পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিহার, গুজরাট, তামিলনাড়ু এবং মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যেও স্মার্ট মিটার চালুর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে তামিলনাড়ুতে আন্দোলন বেশ বড় আকার ধারণ করেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিষেবার বেসরকারিকরণের চেষ্টা চলছে, যা সাধারণ মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী।

অনেক জায়গায় মিটার লাগানোর পর বিদ্যুৎ সংযোগ বিনা নোটিসে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। মিটার পাঠকদের চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কাও বিক্ষোভকারীদের অন্যতম প্রধান উদ্বেগ।

রাজ্য সরকারের অবস্থান কী?

এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বারবার বৈঠক করছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন এবং বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আপাতত সরকারি সূত্র জানিয়েছে, জোর করে কারও বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানো হবে না।

তবে বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, স্মার্ট মিটার দীর্ঘমেয়াদে সাধারণ মানুষের জন্যই লাভজনক হবে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে, যাতে মানুষ এই প্রযুক্তির সুবিধা সম্পর্কে সচেতন হন। তবুও রাজ্যের কিছু এলাকায় স্মার্ট মিটার লাগানো নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। দেখা যাচ্ছে, যতই সুবিধার কথা বলা হোক না কেন, স্মার্ট মিটার নিয়ে মানুষের আশঙ্কা এখনও কাটছে না।

About Author