বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের ব্যয় ক্রমশ বাড়ছে, আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আর্থিক পরিকল্পনার গুরুত্বও বাড়ছে। ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের কথা ভাবলে পোস্ট অফিসের ফিক্সড ডিপোজিট (Post Office Fixed Deposit) অন্যতম সেরা বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি এমন একটি স্কিম যেখানে বিনিয়োগ করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুদসহ আসল টাকা দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে। আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেন, তাহলে এই স্কিম কেমনভাবে আপনাকে আর্থিকভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারে, তা এবার বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
কীভাবে ৫ লাখ টাকা ১৫ লাখে পরিণত হবে?
অনেকেই ভাবতে পারেন, মাত্র ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কীভাবে ১৫ লাখ টাকা করা সম্ভব? এটি সম্ভব পোস্ট অফিসের ফিক্সড ডিপোজিটের চক্রবৃদ্ধি সুদের (compound interest) মাধ্যমে। বর্তমানে ৫ বছরের ফিক্সড ডিপোজিটে বার্ষিক ৭.৫% সুদের হার দেওয়া হচ্ছে। এখন দেখা যাক, পরিকল্পিতভাবে এই বিনিয়োগ কীভাবে বাড়তে পারে—
প্রথম ধাপ:
আপনি যদি ৫ লাখ টাকা পোস্ট অফিসের ফিক্সড ডিপোজিটে ৫ বছরের জন্য রাখেন, তাহলে নির্ধারিত সুদ অনুসারে মেয়াদ শেষে আপনার মোট টাকা হবে ৭,২৪,৯৭৪ টাকা।
দ্বিতীয় ধাপ:
যদি আপনি পুরো অর্থ আবারও ৫ বছরের জন্য ফিক্সড ডিপোজিটে রাখেন, তাহলে ১০ বছর পর এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ১০,৫১,১৭৫ টাকা।
তৃতীয় ধাপ:
একইভাবে তৃতীয় দফায় অর্থ পুনরায় ফিক্সড ডিপোজিটে রাখলে, ১৫ বছরের শেষে এটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ১৫,২৪,১৫৯ টাকা।
অর্থাৎ, কেবলমাত্র একটি সঠিক পরিকল্পনা অনুসরণ করলেই আপনার ৫ লাখ টাকা ১৫ বছরের মধ্যে ১৫ লাখ টাকায় পরিণত হতে পারে, তাও সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত উপায়ে।
কেন পোস্ট অফিসের ফিক্সড ডিপোজিট বিনিয়োগের জন্য আদর্শ?
বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য অসংখ্য অপশন থাকলেও পোস্ট অফিসের ফিক্সড ডিপোজিট কিছু নির্দিষ্ট কারণে অন্য অনেক স্কিমের তুলনায় বেশি লাভজনক এবং নিরাপদ। এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো—
১. সরকারি নিশ্চয়তা: পোস্ট অফিস সরাসরি ভারত সরকারের আওতায় পরিচালিত হয়, তাই এখানে বিনিয়োগ করলে অর্থ হারানোর কোনো ঝুঁকি নেই।
২. উচ্চ সুদের হার: বর্তমানে ৫ বছরের ফিক্সড ডিপোজিটের জন্য ৭.৫% সুদ দেওয়া হচ্ছে, যা অনেক ব্যাংকের সুদের হারের তুলনায় বেশি।
৩. আয়করে ছাড়: পোস্ট অফিসের ৫ বছরের ফিক্সড ডিপোজিট স্কিমে বিনিয়োগ করলে আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়।
৪. পুনর্নবীকরণ সুবিধা: নির্ধারিত সময় শেষে চাইলে বিনিয়োগকারীরা তাদের এফডি পুনরায় নবায়ন করতে পারেন।
এছাড়াও, এটি অত্যন্ত সহজ এবং ঝামেলাবিহীন একটি বিনিয়োগ মাধ্যম, যা যে কেউ সহজেই পরিচালনা করতে পারেন।
পোস্ট অফিসের ফিক্সড ডিপোজিটের সুদের হার
ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদের হার মূলত মেয়াদের ওপর নির্ভর করে। পোস্ট অফিস বর্তমানে নিম্নলিখিত হারে সুদ প্রদান করছে—
১ বছরের মেয়াদে – ৬.৯%
২ বছরের মেয়াদে – ৭%
৩ বছরের মেয়াদে – ৭.১%
৫ বছরের মেয়াদে – ৭.৫%
যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের কথা ভাবছেন, তাদের জন্য ৫ বছরের ফিক্সড ডিপোজিট সবচেয়ে লাভজনক, কারণ এতে সর্বোচ্চ সুদের হার পাওয়া যায়।
ফিক্সড ডিপোজিট পুনর্নবীকরণের নিয়ম
অনেকেই প্রশ্ন করেন, মেয়াদ শেষে টাকা কীভাবে পুনরায় এফডি করা যায়? পোস্ট অফিসের নতুন নিয়ম অনুযায়ী—
১ বছরের এফডি পুনরায় নবায়ন করতে চাইলে ৬ মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
২ বছরের এফডি পুনরায় চালু করতে হলে ১২ মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
৩ এবং ৫ বছরের এফডি পুনর্নবীকরণের জন্য ১৮ মাসের মধ্যে নতুন করে বিনিয়োগ করতে হবে।
যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুনরায় বিনিয়োগ করা হয়, তাহলে আপনি একই সুদের হারে লাভবান হতে পারেন এবং আপনার মূলধন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ গড়তে পোস্ট অফিসের ফিক্সড ডিপোজিট একটি চমৎকার বিনিয়োগের উপায়। যারা কম ঝুঁকিতে নিশ্চিত রিটার্ন চান, তাদের জন্য এটি অন্যতম সেরা অপশন। মাত্র ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে এটি ১৫ বছরে ১৫ লাখের বেশি হতে পারে, যা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য বেশ উপকারী।
যদি আপনি নিশ্চিত মুনাফাসহ নিরাপদ বিনিয়োগের কথা ভাবছেন, তাহলে পোস্ট অফিসের ফিক্সড ডিপোজিট হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ সমাধান। পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ করলে আপনার অর্থ কেবল সুরক্ষিতই থাকবে না, বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন। আর ফ্রিতে নয়, টাকা খরচ করে দেখতে হবে IPL, নতুন সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান আনলো JioHotstar !!