Pipeline Gas: পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় সুখবর আসতে চলেছে। জুন মাস থেকে রাজ্যের কয়েকটি অঞ্চলে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। বেঙ্গল গ্যাস কোম্পানি (BGC) ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে, যা কলকাতা এবং আশেপাশের বিভিন্ন জেলায় গৃহস্থালির রান্নার গ্যাস ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করে তুলবে।
বর্তমান রান্নার গ্যাস ব্যবস্থা ও তার সীমাবদ্ধতা
বর্তমানে বেশিরভাগ পরিবার রান্নার জন্য এলপিজি (LPG) সিলিন্ডারের ওপর নির্ভরশীল। তবে এই ব্যবস্থা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়। একটি সিলিন্ডার শেষ হয়ে গেলে নতুনটি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, যা কখনো কখনো এক-দুই দিনও লেগে যায়। অনেকের বাড়িতে একটি মাত্র সিলিন্ডার থাকায় গ্যাস ফুরিয়ে গেলে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। যদিও যাদের বাড়িতে দু’টি সিলিন্ডার থাকে, তারা কিছুটা স্বস্তিতে থাকেন, তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
এর পাশাপাশি, এলপিজি সিলিন্ডারের দামও সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় বোঝা। বর্তমানে প্রতিটি সিলিন্ডারের মূল্য প্রায় ৮৫০ টাকা, যা প্রতি মাসে গৃহস্থালির ব্যয়কে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে। বাজারে গ্যাসের দামের ওঠানামার কারণে অনেক সময় সাধারণ মানুষকে চাপে পড়তে হয়।
পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগের সুবিধা
নতুন পাইপলাইন গ্যাস প্রকল্প চালু হলে সাধারণ মানুষের এইসব সমস্যার সমাধান হবে। পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ হলে—
- কম খরচে গ্যাস মিলবে: রান্নার খরচ কমে যাবে, যা বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য বড় স্বস্তির বিষয় হবে।
- নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ: এলপিজি সিলিন্ডারের মতো গ্যাস শেষ হয়ে গেলে নতুন সিলিন্ডার আনার ঝামেলা থাকবে না।
- দীর্ঘমেয়াদী সাশ্রয়: গ্যাসের দামের হঠাৎ পরিবর্তন বা সরবরাহজনিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।
- নিরাপদ ব্যবস্থা: পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের ফলে এলপিজির মতো সিলিন্ডার লিক বা বিস্ফোরণের ঝুঁকি কমে যাবে।
কোথায় এবং কবে চালু হচ্ছে পাইপলাইন গ্যাস?
বেঙ্গল গ্যাস কোম্পানি (BGC) ধাপে ধাপে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা করছে।
প্রাথমিকভাবে, এই সুবিধা কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে চালু হবে, যার মধ্যে রয়েছে হাওড়া, হুগলি, নদীয়া এবং ২৪ পরগনার কিছু অংশ। বর্তমানে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে, এবং প্রথম ধাপে হুগলির কল্যাণী ও চন্দননগর অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হবে।
বিজিসি ইতোমধ্যেই গয়েশপুর ও মগরা এলাকায় দুটি সিটি গেট স্টেশন স্থাপন করেছে, যা পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ সহজ করবে। পরবর্তী ধাপে ধাপে অন্যান্য অঞ্চলেও সংযোগ বিস্তৃত করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই প্রকল্পের আওতায় প্রথম বছরেই প্রায় ৩০,০০০ বাড়িতে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হবে।
প্রথম পর্যায়ে পাইপলাইন নেটওয়ার্ক বিভিন্ন জেলা ও শহরতলিতে বিস্তৃত করা হবে, তারপর ধাপে ধাপে কলকাতা শহরেও এই পরিষেবা চালু করা হবে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে কলকাতায় পাইপলাইন গ্যাস সংযোগ সম্পূর্ণরূপে চালু হবে।
নতুন প্রকল্পের সম্ভাব্য প্রভাব
বিজিসির এই প্রকল্প রাজ্যের লক্ষাধিক পরিবারকে উপকৃত করবে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে, কারণ তারা কম খরচে এবং ঝামেলাহীনভাবে রান্নার গ্যাস পাবে। সাশ্রয়ী ও নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের ফলে দৈনন্দিন জীবন আরও সহজ হয়ে উঠবে।
পরিবেশের দিক থেকেও এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক গ্যাস তুলনামূলকভাবে কম কার্বন নিঃসরণ করে, যা বায়ুদূষণ কমাতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি, পাইপলাইন গ্যাস ব্যবহারের ফলে এলপিজি পরিবহনের প্রয়োজন কমে যাবে, যা লজিস্টিক খরচও কমিয়ে আনবে।
উপসংহার
পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করবে। এটি শুধু খরচ কমাবে না, বরং সুরক্ষিত, নিরবিচ্ছিন্ন ও পরিবেশবান্ধব গ্যাস সরবরাহের সুযোগ তৈরি করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবেন এবং রান্নার গ্যাস ব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হবে।
আগামী দিনে কলকাতা এবং তার আশেপাশের অঞ্চলগুলিতে পাইপলাইন গ্যাস সংযোগ আরও সম্প্রসারিত হবে। এই উদ্যোগ শুধুমাত্র গৃহস্থালির জন্য নয়, বরং শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্যও বড় সুবিধা বয়ে আনবে। পাইপলাইন গ্যাস সংযোগ চালু হলে এটি পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।