Myanmar Earthquake: শুক্রবার সকালের এক আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে কেঁপে উঠল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার (Southeast Asia) বিস্তীর্ণ এলাকা। মায়ানমার (Myanmar) ও থাইল্যান্ড (Thailand)-সহ আশপাশের দেশগুলিতে শক্তিশালী ভূমিকম্প (Earthquake) আঘাত হানে, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মুহূর্তের মধ্যে চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। বিশেষ করে ব্যাংকক (Bangkok) এবং ম্যান্ডালে (Mandalay)-এর মতো বড় শহরে এই ভূমিকম্পের প্রভাব বেশি পড়ে।
রাতে ভূমিকম্প, আতঙ্কে রাস্তায় মানুষ
এই বিপর্যয় এতটাই তীব্র ছিল যে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় বড় বিল্ডিং কেঁপে ওঠে, গ্লাস জানালা ভেঙে পড়ে এবং অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অনেকেই তখন নামাজ পড়ছিলেন, কেউ বা ঘুমাচ্ছিলেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা নামাজ পড়ছিলাম, তখনই হঠাৎ করে প্রবল কম্পন অনুভূত হয়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছাদ ভেঙে পড়ে, ফলে তিনজনের মৃত্যু হয়।”
ব্যাংককে (Bangkok) আতঙ্কিত জনতা রাস্তায় নেমে আসে, শিশুরা কাঁদতে থাকে, অনেকেরই প্যানিক অ্যাটাক হয়। শহরের স্কুল-কলেজ, অফিসে অ্যালার্ম বেজে ওঠে, ফলে হাজার হাজার মানুষকে দ্রুত ভবন থেকে বের করে আনা হয়। একজন ইংরেজি শিক্ষিকা, অ্যামি ক্লেটন (Amy Clayton), বলেন, “আমি মাথা ঘুরতে থাকা অনুভব করলাম। মনে হচ্ছিল আমি অজ্ঞান হয়ে যাব। তারপরই স্কুলে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে, আমরা ছাত্রীদের নিয়ে বাইরে দৌড়ে যাই।”
মায়ানমারে মসজিদ ধসে মৃত্যু, থাইল্যান্ডে নিখোঁজ ৯০ জন
এই ভূমিকম্পের কারণে মায়ানমারের বাগো (Bago) অঞ্চলে একটি মসজিদ সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়ে, যেখানে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি, থাইল্যান্ডের একটি হাই-রাইজ নির্মাণস্থলে (High-rise construction site) একটি বিশাল কাঠামো ভেঙে পড়ায় তিনজন মারা গিয়েছেন এবং এখনও পর্যন্ত ৯০ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সুটিন ক্লুংসাং (Thai Defense Minister Sutin Klungsang) নিশ্চিত করেছেন, “আমরা এখনও পর্যন্ত ৯০ জনকে খুঁজে পাইনি। উদ্ধারকারী দল কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।” ব্যাংককে (Bangkok) রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছে, কারণ তারা ভবনগুলিতে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
ভূমিকম্পের কারণ ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (National Centre for Seismology)-এর ডিরেক্টর ড. ওপি মিশ্র (Dr. OP Mishra) জানিয়েছেন, এই ভূমিকম্পটি সাগাইং ফল্ট (Sagaing Fault) লাইনের উপর ঘটেছে, যা ১২০০ কিমি দীর্ঘ এবং অতীতে বহু শক্তিশালী ভূমিকম্প ঘটিয়েছে। মূল ভূমিকম্পটি ১১:৫০ AM-এ আঘাত হানে, এরপর আরও তিনটি বড় আফটারশক (Aftershock) অনুভূত হয়, যার মধ্যে একটির মাত্রা ছিল ৭.০, বাকি দুটি ছিল ৫.০ এবং ৪.৯। তিনি আরও জানান, “ব্যাংকক একটি নরম অ্যালুভিয়াল বেল্টের (Alluvial belt) উপর অবস্থিত, যেখানে ভূমির তরলীকরণ (Liquefaction) হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফলে বিল্ডিংগুলির ভিত নরম হয়ে পড়ে এবং ভেঙে পড়ে।”
উদ্ধার অভিযান জোরকদমে চলছে, আরও আফটারশকের আশঙ্কা
সরকারি সূত্রে খবর, উদ্ধারকারী দল (Rescue team) রাতভর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করা সহজ হবে না। থাইল্যান্ড এবং মায়ানমার প্রশাসন নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে, কারণ আরও আফটারশকের (Aftershock) সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতীয় দূতাবাস (Embassy of India) জানিয়েছে, ভারতীয় নাগরিকদের জন্য একটি বিশেষ হেল্পলাইন (+66 618819218) চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত কোনও ভারতীয় নাগরিক হতাহত হননি। এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কতটা বিধ্বংসী হতে পারে, তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল। এখন দেখার, কত দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং সরকার কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করে।