Asha Workers Protest: বেতন না পেলে সংসার চালানো যে কতটা কঠিন, তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বোঝেন। গৃহস্থালির খরচ থেকে শুরু করে সন্তানদের পড়াশোনা, ওষুধপত্র কিংবা দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানো—সবকিছুতেই টাকা প্রয়োজন। অথচ সেই বেতনই যদি ৪-৫ মাস ধরে না মেলে, তাহলে সেই পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে! এমনই এক জ্বলন্ত সমস্যার মুখে পড়েছেন রাজ্যের আশা কর্মীরা। মাসের পর মাস পরিশ্রম করেও সময়মতো বেতন না পাওয়ায় তাঁদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বারবার প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হলেও সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। আর তাই এবার আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা।
উচ্চপদস্থদের আশ্বাস, কিন্তু সমস্যা জিইয়ে
এমন নয় যে এই সমস্যার কথা সরকারের অজানা। দীর্ঘদিন ধরেই আশা কর্মীরা তাঁদের বেতন এবং ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় রাজ্য সরকার তাঁদের আশ্বাসও দিয়েছে যে সমস্যার সমাধান করা হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই আশ্বাস কার্যকর হয়নি। বরং তাঁদের বকেয়া বেতন আরও বাড়তে শুরু করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আশাকর্মীদের অভিযোগ, নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় তাঁরা প্রবল আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। অথচ যাঁরা দিনরাত পরিশ্রম করে গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের অবস্থা এতটা করুণ হবে, তা ভাবতেই পারছেন না সাধারণ মানুষ।
দাবি মানা না হলে বন্ধ হবে কাজ!
সম্প্রতি বাঁকুড়ায় এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেন প্রায় ১৬০০ আশা কর্মী। তাঁরা দাবি তোলেন, অবিলম্বে বেতন নিয়মিত দিতে হবে এবং মাসিক ভাতা কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা করতে হবে। এছাড়াও, কর্মরত অবস্থায় কোনো আশা কর্মীর মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এই দাবিগুলি পূরণ না হলে কাজ বন্ধ রাখার হুমকিও দিয়েছেন তাঁরা। স্বাস্থ্য পরিসেবার ক্ষেত্রে আশা কর্মীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিকাকরণ থেকে শুরু করে মাতৃসদনের কাজ, সবেতেই তাঁদের নিরলস পরিশ্রম থাকে। তাই তাঁদের কাজ বন্ধ হলে সাধারণ মানুষেরও ভোগান্তি বাড়বে।
রাজ্যের বাজেটে আশাহত আশা কর্মীরা
চলতি বছরের বাজেট পেশ হওয়ার পর আশা কর্মীরা ভেবেছিলেন যে তাঁদের জন্য কিছু সুখবর আসবে। কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁদের নিয়ে কোনো ঘোষণা করেনি। মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি করা হলেও, আশা কর্মীদের জন্য বিশেষ কিছু হয়নি। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করেও মাসের শেষে মাত্র ৫২৫০ টাকা পাচ্ছেন তাঁরা। তাও সময়মতো দেওয়া হচ্ছে না। অনেকের ৩ থেকে ৫ মাসের বেতন বকেয়া পড়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা কীভাবে সংসার চালাবেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।
সরকার কী পদক্ষেপ নেবে?
এই বিক্ষোভের পর প্রশাসনের তরফে এখনো পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে আশা কর্মীদের হুঁশিয়ারি যে সরকারকে চাপে ফেলবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ তাঁদের কাজ বন্ধ হলে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে, সরকারের আর্থিক পরিস্থিতিও ভালো নয়, তাই দাবি মেনে নেওয়া কতটা সম্ভব, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আন্দোলন আরও বৃহত্তর আকার নেবে বলে মনে করা হচ্ছে।