Lakshmi Puja 2024: আজ কোজাগরী লক্ষ্মী পূজো। প্রতিটি ঘরে ঘরে এবং পূজা প্যান্ডেলে আড়ম্বরের সঙ্গে প্রতি বছর এই পূজা করা হয়ে থাকে। প্রতি বছর এই দিন ধনসম্পদের দেবীর আরাধনায় মেতে ওঠে মহানায়ক উত্তর কুমারের পরিবার। মহানায়কের ভবানীপুরের বাড়িতে করা হয় পূজার আয়োজন। বর্তমান প্রজন্মই আড়ম্বরের সঙ্গে এই পূজার্চনা করে থাকে। ঐতিহ্যপূর্ণ চট্টোপাধ্যায় বাড়ি লক্ষ্মীপূজোর গুরুভার এখন মহানায়কের নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায় এবং নাতবউ দেবলীনার উপর। চলতি বছর কেমন আয়োজন হচ্ছে চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে! সেই কথাই এক বিশ্বস্ত সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন গৌরব চট্টোপাধ্যায় স্ত্রী দেবলীনা।
অভিনেত্রীর কথায়, “প্রতিবারের মতো এবারেও আয়োজনের কলেবর একইরকম। বিশাল আয়োজন না থাকলেও অতিথি আপ্যায়ণে কোনওরকম খামতি থাকে না। প্রত্যেকেই মাকে ভালোবেসে দর্শন করতে আসেন। প্রতিবারের মতো এবারেও সব রীতি মেনেই পুজো হবে। যথাসম্ভব চেষ্টা করব মনপ্রাণ দিয়ে পুজো করার। আলাদা কিছুই নয়।”
উল্লেখ্য, মহানায়কের বাড়ির লক্ষ্মীপ্রতিমার বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ভবানীপুরের চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে মহানায়কের স্ত্রী গৌরীর আদলেই মা লক্ষ্মীকে পূজা করা হয়ে থাকে। রীতি মেনে উপোস করে পুজোয় বসেন নাতি গৌরব। পুজোর আয়োজন করেন দেবলীনা কুমার। মহানায়কের বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমা যে স্ত্রী গৌরীদেবীর মুখের আদলে তৈরি তা এখন অনেকেই জানেন। তবে এর নেপথ্যে রয়েছে এক অজানা ইতিহাসও। সে সময়ে ‘যদুভট্ট’ ছবির শুটিংয়ে মূর্তি গড়ছিলেন নিরঞ্জন পাল। শুটিং ফ্লোরের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে সেই দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয় উত্তমকুমারের। তিনি শিল্পীকে লক্ষ্মী প্রতিমা গড়ার বায়না দেওয়ার জন্য বাড়িতে ডেকে পাঠান। শিল্পী বাড়িতে পৌঁছে উত্তমকুমারের খোঁজ করতে গিয়ে দেখতে পান ঘর মুছছেন গৌরীদেবী। তিনি ঘোমটার ফাঁক থেকে এক ঝলক তাকিয়ে শিল্পীকে বসতে বলে উত্তমকুমারকে ডেকে দেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই শিল্পীর চোখে মা লক্ষ্মীর ছবি আঁকা হয়ে গিয়েছিল। তিনি ছাঁচ ভেঙে গৌরীদেবীর মুখের আদলে গড়েছিলেন লক্ষ্মীমূর্তি। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত ভবানীপুরে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমার মুখের গড়ন একই রকম।
পুজোর আগের দিন কুমোরটুলি থেকে লক্ষ্মী প্রতিমা আনা হয়। সেই মূর্তির পরনে থাকে লাল পাড় সাদা শাড়ি। বাড়িতে আনার পর নতুন করে সেই প্রতিমাকে সুসজ্জিত করে তোলা হয়। দেবলীনা জানান, “প্রতি বার আত্মীয়-পরিজনের কেউ না কেউ শাড়ি দেন। এ বার যেমন আমার মা বেনারসি দিয়েছেন। সেই শাড়িটিই প্রতিমার অঙ্গে উঠবে। সঙ্গে সোনা, সোনার জল করা বেশ কিছু রুপোর গয়নাও থাকবে।” বিসর্জনের সময়ে বেনারসি বদলে বাড়ির লক্ষ্মীকে সেই লাল পাড় সাদা শাড়ি পরানো হয় এবং প্রথা মেনে দেবীর পরিহিত বেনারসি তুলে দেওয়া হয় বাড়ির বৌয়ের হাতে। দেবলীনা জানান, “বাড়ির বৌ বলতে এখন আমিই। তাই কয়েক বছর ধরে ওই শাড়িটি আমার ভাগ্যেই থাকে।”
View this post on Instagram
চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে আজও ঘরের মেয়ে রূপে পূজিতা হন দেবী লক্ষ্মী। তাহলেও সব পূজোর তো এক হয়না। নিয়মে এ পার-ও পারের রয়েছে বিস্তর ফারাক। আর পাঁচটি বাড়িতে যেমন ভোগ হয়, চট্টোপাধ্যায় বাড়িতেও দেবী লক্ষ্মীর জন্য নানা রকম পদের আয়োজন করা হয়। তবে সেই ভোগ রান্না করার অধিকার সকলের নেই। পরিবারের দীক্ষিত সদস্যেরাই একমাত্র সেই ভোগ রাঁধতে পারেন। লুচি, পাঁচ রকম ভাজা, তরকারি, ডাল, চাটনি, মিষ্টিও থাকে ভোগের তালিকায়। লক্ষ্মীপুজোয় নাড়ু থাকা আবশ্যক। তবে দেবলীনা জানিয়েছেন, মহানায়কের বাড়িতে নারকেল নাড়ু, তিলের নাড়ুর পাশাপাশি আনন্দ নাড়ুও হয়ে থাকে। তিনি বলেন, “আমরা তো এ দেশীয়। তাই বাড়ির রীতি মেনে তৈরি হয় আনন্দ নাড়ু। নারকেল, তিল বা ক্ষীরের নাড়ুর চেয়েও ওই নাড়ুটির গুরুত্ব এ বাড়িতে বেশি।”
বাড়ির ছেলে-মেয়ে-বৌ মিলেই ভাগ করে নেন পূজোর যাবতীয় দায়িত্ব। বাড়ির ছেলেরা সিল্কের জোড় পরে পুজোয় বসেন। পরের দিন আবার বদলে ফেলা হয় দেবীর সাজ। চট্টোপাধ্যায় বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমাকে সাজিয়ে তোলা হয় ফুলের সাজে। ফুলের মুকুট, মালা, বাজুবন্ধে তখন যেন তিনি বাড়ির নতুন বৌ। দেবীর সঙ্গে সঙ্গে ফুলের সাজে সাজানো হয় বাহনটিকেও। দেবলীনা বলেন, “পুজোর পরের দিন, অর্থাৎ বিসর্জনের আগে দেবীকে ফুলের সাজে সাজিয়েই বিদায় জানানো হয়।”
আরও পড়ুন: Ration Card: মাসে দুবার করে মিলবে রেশন! কারা পাবেন সুবিধা, জেনে নিন বিস্তারিত